Description
মুসলিম শরীফ ৩য় খণ্ড
মুসলিম শরীফ ৩য় খণ্ড – তাহারাত পর্বের হাদিস
১০. অধ্যায়ঃ
তাহারাতের সকল অঙ্গ পূর্ণভাবে ধোয়ার আবশ্যকতা
৪৬৪
ওমর ইবনল খাত্তাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ওযূ করিতে তার পায়ের ওপর নখ পরিমাণ অংশ ছেড়ে দেয়। তা দেখে নাবী[সাল্লাল্লাহু আঃ] বললেনঃ যাও, আবার ভালভাবে ওযূ করে আসো। লোকটি ফিরে গেল। তারপর [পুনরায়] ওযূ করে নামায আদায় করিল। [ইসলামিক ফা:- ৪৬৭, ইসলামিক সে.- ৪৮৩]
১১. অধ্যায়ঃ
ওযূর পানির সঙ্গে গুনাহ ঝরে যাওয়া
৪৬৫
আবু হোরাইরা[রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলিম কিংবা মুমিন বান্দা [রাবীর সন্দেহ] ওযূর সময় যখন মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সাথে অথবা [তিনি বলেছেন] পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় এবং যখন সে দুটি হাত ধৌত করে তখন তার দুহাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গুনাহ পানির অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝড়ে যায়। অতঃপর যখন সে পা দুটি ধৌত করে, তখন তার দুপা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝড়ে যায়, এমনকি সে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। [ইসলামিক ফা:- ৪৬৮, ইসলামিক সে.- ৪৮৪]
৪৬৬
উসমান ইবন আফফান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ওযূ করে এবং তা উত্তমরূপে করে, তার দেহ থেকে সমস্ত পাপ ঝড়ে যায়, এমনকি তার নখের ভিতর থেকেও [গুনাহ] বের হয়ে যায়। [ইসলামিক ফা:- ৪৬৯, ইসলামিক সে.- ৪৮৫]
১২. অধ্যায়ঃ
ওযূতে মুখমন্ডলের নূর এবং হাত-পায়ের দীপ্তি বাড়িয়ে নেয়া মুস্তাহাব
৪৬৭
নুআয়ম ইবন আবদুল্লা আল মুযমির [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেছেন, আমি আবু হুরায়রা্[রাঃআঃ]-কে ওযূ করিতে দেখেছি। তিনি খুব ভালভাবে মুখমন্ডল ধুলেন, এরপর ডান হাত ধুলেন এবং বাহুর কিছু অংশ ধুলেন। পরে বাম হাত ও বাহুর কিছু অংশসহ ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ করিলেন। অতঃপর ডান পায়ের নালার কিছু অংশসহ ধুলেন, এরপর বাম পায়ের নালার কিছু অংশসহ একইভাবে ধুলেন। অতঃপর বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ]-কে এভাবে ওযূ করিতে দেখেছি। তিনি আরো বলিলেন, রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেছেনঃ পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করার কারণে কিয়ামাতের দিন তোমাদের মুখমন্ডল, হাত ও পায়ের ওযূর স্থান জ্যোতির্ময় হইবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা সক্ষম তারা যেন নিয নিয মুখমন্ডল, হাত ও পায়ের জ্যোতি বাড়িয়ে নেয়। [ইসলামিক ফা:- ৪৭০, ইসলামিক সে.- ৪৮৬]
৪৬৮
নুআয়ম ইবন আবদুল্লা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি আবু হুরায়রা্[রাঃআঃ]-কে ওযূ করিতে দেখলেন। ওযূ করিতে তিনি মুখমন্ডল ও হাত দুটি এমনভাবে ধুলেন যে, প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ধুয়ে ফেললেন। এরপর পা দুটি এমনভাবে ধুলেন যে, পায়ের নালার কিছু অংশ ধুয়ে ফেললেন। এভাবে ওযূ করার পর বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ]-কে বলিতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমার উম্মাত ওযূর প্রভাবে কিয়ামাতের দিন দীপ্তিময় মুখমন্ডল ও হাত-পা নিয়ে উঠবে। কাজেই তোমরা যারা সক্ষম তারা অধিক বিস্মৃত দীপ্তিসহ উঠতে সে যেন চেষ্টা করে। [ইসলামিক ফা:- ৪৭১, ইসলামিক সে.- ৪৮৭]
৪৬৯
আবু হোরাইরা[রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেন, আমার হাওযে কাওসার হইবে আদান [ইয়ামানের বন্দর নগরী] থেকে আইলা [আরবের উত্তরাঞ্চলীয় শহর]-এর যত দূরত্ব তার থেকেও বেশি দীর্ঘ। আর তা হইবে বরফের থেকেও সাদা এবং দুধ মধু থেকে মিষ্টি। আর তার পাত্রের সংখ্যা হইবে তারকারাজির চেয়েও অধিক। আমি কিছু সংখ্যক লোককে তা থেকে ফিরিয়ে দিতে থাকবো যেমনিভাবে লোকে তার হাওয থেকে অন্যের উট ফিরিয়ে দেয়। সহাবায়ে কিরাম আরয করিলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ! সেদিন কি আপনি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বলিলেন, “হ্যাঁ, তোমাদের এমন চিহ্ন হইবে যা অন্য কোন উম্মাতের হইবে না। ওযূর বিনিময়ে তোমাদের মুখমন্ডল জ্যোতির্ময় ও হাত-পা দীপ্তিমান অবস্থায় তোমরা আমার কাছে আসবে”। [ইসলামিক ফা:- ৪৭২, ইসলামিক সে.- ৪৮৮]
৪৭০
আবু হোরাইরা[রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কিছুলোক কিয়ামাতের দিন আমার কাছে হাওযে কাওসারে উপস্থিত হইবে। আর আমি তাদেরকে তা থেকে এমনভাবে বিতাড়িত করব, যেভাবে কোন ব্যক্তি তার উটের পাল থেকে অন্যের উটকে বিতাড়িত করে থাকে। [এ কথা শুনে] লোকেরা জিজ্ঞেস করলঃ আল্লাহর নাবী! আপনি কি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? যবাবে তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তোমাদের এমন এক চিহ্ন হইবে যা অন্য কারোর হইবে না। ওযূর প্রভাবে তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত-পায়ের দীপ্তি ও উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়বে। উজ্জ্বল জ্যোতি বিচ্ছুরিত অবস্থায় তোমরা আমার নিকট আসবে। আর তোমাদের একদল লোককে জোর করে আমার থেকে ফিরিয়ে দেয়া হইবে। তাই তারা আমার কাছে পৌঁছাতে পারবে না। তখন আমি বলব, হে আমার প্রভু! এরাতো আমার লোক। এর যবাবে একযন ফেরেশতা আমাকে বলবে, আপনি জানেন না, আপনার অবর্তমানে [ইনতিকালের পরে] তারা কি কি নতুন কায [বিদআত] করেছে। [ইসলামিক ফা:- ৪৭৩, ইসলামিক সে.- ৪৮৯]
৪৭১
হুযাইফাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেছেনঃ আমার হাওয [হাওযে কাওসার] আইলা থেকে আদান-এর দূরত্ব পরিমাণ দীর্ঘ। সে মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! আমি তা থেকে কিছু মানুষকে এমনভাবে তাড়াবো যেমন কোন ব্যক্তি অপরিচিত উটকে তার পানির কূপ থেকে তাড়িয়ে দেয়। লোকেরা জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি সেদিন আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। ওযূর প্রভাবে তোমাদের চেহারা ও হাত-পা থেকে উজ্জ্বল জ্যোতি ছড়িয়ে পড়া অবস্থায় তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হইবে। এটা তোমাদের ছাড়া অন্য উম্মাতের যন্যে হইবে না। [ইসলামিক ফা:- ৪৭৪, ইসলামিক সে.- ৪৯০]
৪৭২
আবু হোরাইরা[রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
একবার রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ] একটি কবরস্থানে এসে বলিলেন, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে কবরবাসী মুমিনগণ! ইন্শাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে এসে মিলব। আমার বড় ইচ্ছা হয় যে আমাদের ভাইদেরকে দেখি। সহাবায়ে কিরাম আরয করিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বলিলেন, তোমরা তো আমার সহাবা। আর যারা এখনো [পৃথিবীতে] আসেনি তারা আমাদের ভাই। সহাবায়ে কিরাম আরয করিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার উম্মাতের মধ্যে যারা এখনো [পৃথিবীতে] আসেনি তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বলিলেন, “কেন, যদি কোন ব্যক্তি সাদা রঙের কপাল ও সাদা রঙের হাত-পা বিশিষ্ট ঘোড়া অনেকগুলো কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায় তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারবে না? তাঁরা বলিলেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ! তিনি বলিলেন, তাঁরা [আমার উম্মাত] সেদিন এমন অবস্থা আসবে যে, ওযূর ফলে তাদের মুখমন্ডল, হাত-পা জ্যোতির্ময় হইবে। আর হাওযের পাড়ে আমি হব তাদের অগ্রনায়ক। জেনে রাখ, কিছু সংখ্যক লোককে সেদিন আমার হাওয থেকে তাড়িয়ে দেয়া হইবে যেমনিভাবে বেওয়ারিশ উটকে তাড়িয়ে দেয়া হইবে। আমি তাদেরকে ডাকব, এসো এসো। তখন বলা হইবে, “এরা আপনার পরে [আপনার দীনকে] পরিবর্তন করে দিয়েছিল”। তখন আমি বলব, “দূর হও, দূর হও”। [ইসলামিক ফা:- ৪৭৫, ইসলামিক সে.- ৪৯১]
৪৭৩
আবু হোরাইরা[রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
একবার রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] ক্ববরস্থানে গেলেন ও বলিলেন, “মুমিনদের বাসস্থানে [ক্ববরস্থানে] তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর আমরা ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে এসে শামিল হব। অবশিষ্টাংশ ইসমাইল ইবন জাফার-এর বর্ণিত [পূর্বের] হাদীসের অনুরূপ। তবে মালিক-এর হাদীসের এতটুকু বেশি আছে, অবশ্যই কিছু লোককে এ হাওয থেকে তাড়িয়ে দেয়া হইবে। [ইসলামিক ফা:- ৪৭৬, ইসলামিক সে.- ৪৯২]
১৩. অধ্যায়ঃ
যে পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে সে পর্যন্ত অলঙ্কার পরানো হইবে
৪৭৪
আবু হাযিম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেছেন, একদিন আমি আবু হুরায়রা্[রাঃআঃ]-এর পিছনে ছিলাম। [দেখলাম] তিনি সালাতের যন্যে ওযূ করছেন। তিনি হাতের বগল পর্যন্ত ধুলেন। তখন আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা্[রাঃআঃ]! এটা কেমন ধরনের ওযূ? তিনি অবাক হয়ে বলিলেন, হে বানী ফার্রূখ! যদি আমি জানতাম তোমরা এখানে আছো, তাহলে আমি এ ধরনের ওযূ করতাম না। আমি আমার বন্ধু {রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ]}-কে বলিতে শুনেছি, তিনি বলেছেন যে স্থান পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে সে স্থান পর্যন্ত মুমিন ব্যক্তির উজ্জ্বলতা অথবা সৌন্দর্যও পৌঁছবে। [ইসলামিক ফা:- ৪৭৭, ইসলামিক সে.- ৪৯৩]
১৪. অধ্যায়ঃ
কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে ওযূ করার ফযীলত
৪৭৫
আবু হোরাইরা[রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
রাসুলুল্লাহ[সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন কায জানাবো না, যা করলে আল্লাহ [বান্দার] পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেনঃ অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে ওযূ করা, মাসজিদে আসার যন্যে বেশি পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর আর এক সালাতের যন্যে প্রতীক্ষা করা; আর এ কাযগুলোই হল সীমান্ত প্রহরা। {৮০} [ইসলামিক ফা:- ৪৭৮, ইসলামিক সে.- ৪৯৪]
{৮০} রিবাত [সীমান্ত প্রহরী] অর্থঃ কোন জিনিস থেকে বন্ধ থাকা, অর্থাৎ ইতাআতের উপর নিজের আত্মাকে বন্ধ রাখা, তাতে যত কষ্টই হোক।
৪৭৬
মালিক ও শুবাহ্ [রাঃআঃ], উভয়েই আলা ইবন আবদুর রহমান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে শুবাহ্র হাদীসের {আরবী} এর উল্লেখ নেই এবং মালিক [রাঃআঃ]-এর হাদীসে {আরবী} দুবার উল্লেখ রয়েছে। [ইসলামিক ফা:- ৪৭৯, ইসলামিক সে.- ৪৯৫]
Reviews
There are no reviews yet.