Description
সহীহ মুসলিম বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ২য় খন্ড
২০. অধ্যায়ঃ
প্রসাবের ও পায়খানার সময় পর্দা করা
৬৬১
আব্দুল্লাহ ইবন জাফার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেছেন, একদিন রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] আমাকে তাহার সাওয়ারীর পিছন দিকে বসালেন এবং আমাকে চুপে চুপে এমন একটি কথা বলিলেন যা আমি কাউকে কখন বলব না। তবে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] প্রাকৃতিক প্রয়োযন সমাধা করার সময় উচু ঢিলা অথবা ঘন গাছগাছালি দ্বারা ঢাকা স্থানকে সবচেয়ে বেশী পছন্দ করিতেন। ইবন আসমা তাহার বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, অর্থাৎ খেজুর বাগানের আড়ালে মানাবীয় প্রয়োযন সমাধান করাটাই বেশী পছন্দ করিতেন। [ইসলামিক ফা:- ৬৬৫, ইসলামিক সে.- ৬৮০]
২১. অধ্যায়ঃ
একমাত্র বীর্যপাত থেকে গোসল ফার্য করণ {৯৪}
{৯৪} কিন্তু পরবর্তীতে এ হুকুম মানসুখ [রহিত] হয়ে যায় এবং শুধু সহবাসের দ্বারাই গোসল ফারয হয়।
৬৬২
আব্দুর রহমান ইবন আবু সাইদ আল খুদরী [রাঃআঃ] তাহার পিতা আবু সাইদ আল খুদরী হইতে বর্ণীত আছেঃ
কোন এক সোমবারে আমি রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ]-এর সঙ্গে কুবা এলাকার দিকে গেলাম। আমরা বানু সালিম গোত্রের মহল্লায় পৌঁছালে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] ইত্বান এর গেইটে দাঁড়ালেন এবং তাকে উচ্চঃস্বরে ডাকলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি পরনের লুঙ্গি হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বের হয়ে আসলেন। এ অবস্থা দেখে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] বলিলেন, আমরা কি লোকটিকে তাড়াহুড়োয় ফেলে দিলাম? তখন ইতবান বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! যদি কোন ব্যক্তি তাহার স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময় তাড়াহুড়ো করে এবং তাতে বীর্যপাত না হয় তখন তাকে কি করিতে হইবে? [অর্থাৎ তাকে গোসল করিতে হইবে কিনা?] যবাবে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] বলিলেন, বস্তুত বীর্যপাত ঘটলেই গোসল করিতে হইবে। {৯৫} [ইসলামিক ফা:- ৬৬৬, ইসলামিক সে.- ৬৮১]
{৯৪} কিন্তু পরবর্তীতে এ হুকুম মানসুখ [রহিত] হয়ে যায় এবং শুধু সহবাসের দ্বারাই গোসল ফারয হয়।
{৯৫} “বস্তুতঃ বীর্যপাত ঘটলেই গোসল করিতে হইবে।” এ কথার ব্যাখ্যায় ইমাম নাবাবী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সহবাস করলেই গোসল ফরয হয়ে যায়। এ ব্যাপারে উম্মাতের ইযমা [ঐকমত্য] হয়েছে। সহবাস দ্বারা বীর্যপাত হোক বা না হোক শুদুমাত্র পুরুষদের যৌনাঙ্গের অগ্রভাগ মহিলার গুপাতাঙ্গে প্রবেশ করলেই গোসল করিতে হইবে। “বীর্যপাত ঘটলেই গোসল করিতে হইবে” এ হাদীস মানসুখ [রহিত] হয়েছে। অর্থাৎ ইসলামের প্রথম যুগে এ হুকুম ছিল যে, সহবাসে বীর্যপাত না ঘটলে গোসল করা অপরিহার্য নয়। কিন্তু পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে গেছে। এ অধ্যায়ে [৮৭-৩৪৮] নম্বর হাদীসটি নাসিখ [রহিতকারী]
৬৬৩
আবু সাইদ আল খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেন, পানির [ধাতু বের হলে] দ্বারা [গোসল] ফারয হয়। [ইসলামিক ফা:- ৬৬৭, ইসলামিক সে.- ৬৮২]
৬৬৪
আবুল আলা ইবন শিখ্খীর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ]- এর এক হাদীস অপর হাদীসকে মানসুখ [রহিত] করে দিতে যেমনিভাবে কুরআনের এক আয়াত অপর আয়াতকে মানসুখ করে। [ইসলামিক ফা:- ৬৬৮, ইসলামিক সে.- ৬৮৩]
৬৬৫
আবু সাইদ আল খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] এক আনসারীর [বাড়ির] সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] তাকে সংবাদ পাঠালেন। সে বেরিয়ে এলো আর তার মাথা থেকে তখন ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছিল। তিনি [সাল্লাল্লাহু আঃ] বলিলেন, সম্ভবত আমরা তোমাকে তাড়াহুড়োর মধ্যে ফেলেছি। সে বলিল হ্যাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বলিলেন, যখন [কোন কারণে] তোমাকে তাড়াতাড়ি [বীর্য বের হবার আগেই উঠে পড়তে হয়] অথবা বীর্য বের হইতে বাধাপ্রাপ্ত হও তখন তোমার উপর গোসল করা [ফারয] নয় বরং তোমার উপর শুধু ওযূ করা যরুরী। আর ইবন বাশশার বলেন, যখন তোমাকে তাড়াহুড়ার মধ্যে ফেলা হয়েছে বা তোমাকে বীর্যপাত করিতে বাধা দেয়া হয়েছে। [ইসলামিক ফা:- ৬৬৯, ইসলামিক সে.- ৬৬৮]
৬৬৬
উবাই ইবন কাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ]-কে প্রশ্ন করলাম সে ব্যক্তি সম্পর্কে যে স্ত্রী সহবাস করে [অথচ] তারপর বীর্যপাত হল না। তিনি বলিলেন, স্ত্রীর [লজ্জাস্থান] থেকে তার [লজ্জাস্থানে] যা লেগেছে তা ধুয়ে ফেলবে। তারপর ওযূ করিবে এবং নামায আদায় করিবে। [ইসলামিক ফা:- ৬৭০, ইসলামিক সে.- ৬৮৫]
৬৬৭
উবাই ইবন কাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তারপর বীর্যপাত হয় না- তাহার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেন, সে তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে এবং ওযূ করিবে। [ইসলামিক ফা:- ৬৭১, ইসলামিক সে.- ৬৮৬]
৬৬৮
যায়দ ইবন খালিদ আল জুহানী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
একদা তিনি উসমান ইবন আফফান [রাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করেন, কোন লোক যদি তাহার স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করে এবং বীর্যপাত না হয় তাহলে তাহার হুকুম কি? উসমান [রাঃআঃ] বলিলেন, সে সালাতের ওযূ করে নিবে। এবং তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। উসমান [রাঃআঃ] বলেন, আমি এটা রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] থেকে শুনেছি। [ইসলামিক ফা:- ৬৭২, ইসলামিক সে.- ৬৮৭]
৬৬৯
আবু আইয়ুব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] থেকে এমন শুনেছেন। [ইসলামিক ফা:- ৬৭৩, ইসলামিক সে.- ৬৮৮]
২২. অধ্যায়ঃ
কেবল বীর্যপাত হলেই গোসল করিতে হইবে, এ হুকুম রহিতকরণ
৬৭০
আবু হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেন, যখন কেউ তার স্ত্রীর চার-হাত পায়ের মাঝখানে বসবে এবং তার সাথে মিলবে তখন তার উপর গোসল ফারয হইবে।
মাতার-এর হাদীসে যদিও বীর্য বের না করে- বাক্যটি অতিরিক্ত রয়েছে।
যুহায়র বলেছেন, তাদের মধ্য হইতে কেউ যদি নারীর চার শাখার মধ্যে বসে। {৯৬} [ইসলামিক ফা:- ৬৭৪, ইসলামিক সে.- ৬৮৯]
{৯৬} নারীর চার শাখা বলিতে তার দুহাত ও দুপা বুঝানো হয়েছে। তবে কেউ কেউ বলেন, নারীর যোনীর চার পাশ। ইমাম নাবাবী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, নারীর যোনীর মধ্যে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করলে, উভয়ের গোসল ফারয হয়। এক সময় এ সম্বন্ধে সাহাবাদের মাঝে মতানৈক্য থাকলেও পরবর্তী সময়ে গোসল ফরয হওয়ার উপর ইযমা বা ঐকমত্য স্থাপন হয়ে গেছে।
৬৭১
কাতাদাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
অবিকল বর্ণিত রয়েছে। তবে শুবার হাদীসে এরপর মিলিত হয় কথাটির উল্লেখ আছে। কিন্তু যদিও বীর্য বের না হয়- কথাটি বর্ণনা নেই। [ইসলামিক ফা:- ৬৭৫, ইসলামিক সে.- ৬৯০]
৬৭২
আবু মূসা আশআরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেন, মুহাজির ও আনসারদের একটি দল এ ব্যাপারে মতবিরোধ করিল। আনসারগণ বলিল, জোরে অথবা স্বাভাবিক গতিতে পানি [বীর্য] বের না হলে গোসল ফারয হয় না। আর মুহাজিরগণ বলিল, স্ত্রী সঙ্গে শুধু মিললেই গোসল ফারয [বীর্য বের হোক বা না হোক] আবু মূসা [রাঃআঃ] বলিলেন, আমি এ ব্যপারে তোমাদেরকে শান্ত করছি। এরপর আমি উঠে গিয়ে আয়েশাহ [রাঃআঃ]-এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হল। আমি তাকে বললাম, মা ! অথবা [তিনি বলছিলেন] হে মুমিনদের মা! আমি আপনার কাছে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করিতে চাই কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করছি। তুমি তোমার গর্ভধারিণী মাকে যে ব্যপারে প্রশ্ন করিতে পারতে সে ব্যপারে আমাকে প্রশ্ন করিতে লজ্জাবোধ করো না। আমি তো তোমার মা। আমি বললাম, গোসল কিসে ফারয হয়? তিনি বলিলেন, জানা-কোন লোকের কাছেই তুমি প্রশ্ন করেছ। রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] বলেছেন, যখন কোন পুরুষ স্ত্রীর চার হাত-পায়ের মাঝখানে বসবে এবং একের লজ্জাস্থান অপরের লজ্জাস্থানের সাথে লাগবে তখন গোসল ফারয হইবে। [ইসলামিক ফা:- ৬৭৬, ইসলামিক সে.- ৬৯১]
৬৭৩
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ]-এর স্ত্রী আয়েশাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেন, একদা এক লোক রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ]-কে প্রশ্ন করিল-যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করে, অতঃপর বীর্য বের হবার আগেই তার পুরুষাঙ্গ বের করে ফেলে তাহলে কি তাদের উভয়ের গোসল ফারয হইবে? এ সময়ে আয়েশাহ [রাঃআঃ] সেখানে উপবিষ্ট ছিলেন। রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ] বলিলেন, আমি এবং আয়েশাহ [রাঃআঃ] ঐরূপ করি, এরপর আমরা গোসল করে ফেলি। [ইসলামিক ফা:- ৬৭৭, ইসলামিক সে.- ৬৯২]
২৩. অধ্যায়ঃ
অগ্নি স্পৃষ্ট দ্রব্যাদি থেকে [খাবার পর] ওযূ করা সম্পর্কে {৯৭}
{৯৭} অগ্নি স্পৃষ্ট দ্রব্যাদি খাবার পর ওযূ করা। ইমাম নাবাবী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইমাম মুসলিম [রাহিমাহুল্লাহ] এ অধ্যায়ে প্রথমে এ সকল হাদীসের উল্লেখ করিয়াছেন, যেগুলোর দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, আগুনের দ্বারা পাকানো খাদ্যবস্তু খেলে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। অতঃপর ঐ সকল হাদীসের বর্ণনা পেশ করিয়াছেন, যেগুলোর দ্বারা প্রমানিত হয়েছে যে, এ ধরনের খাবার খেলে ওযূ নষ্ট হয় না। সুতরাং প্রথমে উল্লেখিত হাদীসসমুহ মানসুখ [রহিত]। এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী যমহুর উলামায়ে কিরাম, সাহাবায়ি কিরাম ও তাবিইনে প্রায় ঐকমত্য ঘোষণা করিয়াছেন। তবে যে কোন জিনিস খাওয়ার পর কুলি করা এবং হাত-মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলা মুস্তাহাব [নাবাবী]
৬৭৪
যায়দ ইবন সাবিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলু ল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ]-কে বলিতে শুনেছি তিনি বলেছেন, আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে ওযূ করিতে হইবে। [ইসলামিক ফা:- ৬৭৮, ইসলামিক সে.- ৬৯৩]
৬৭৫
ইবন শিহাব বলেন, ওমর ইবন আবদুল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ] তাঁকে বলেছেন, আবদুল্লা ইবন ইব্রাহীম ইবন কারিয [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত আছেঃ
তিনি একদিন আবু হুরায়রা [রাঃআঃ]- কে মাসজিদের সামনে ওযূ করিতে দেখেছেন। আবু হুরায়রা[রাঃআঃ] বলেন, আমি কয়েক টুকরো পনির খেয়েছি, তাই ওযূ করছি। কেননা, আমি রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আঃ]-কে বলিতে শুনেছি। তোমরা আগুনের রান্না করা খাবার খেলে ওযূ করিবে। [ইসলামিক ফা:- ৬৭৮, ইসলামিক সে.- ৬৯৩]
৬৭৬
ইবন শিহাব হইতে বর্ণীত আছেঃ
আমি সাইদ ইবন খালিদ ইবন আম্র ইবন উসমান –এর কাছে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলিলেন যে, তিনি আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে ওযূ করা সম্পর্কে উরওয়াহ্ন ইবন যুবায়রকে জিজ্ঞেস করিলেন, তিনি বলিলেন, আমি নাবী [সাল্লাল্লাহু আঃ]-এর স্ত্রী আয়েশাহ [রাঃআঃ]- কে বলিতে শুনেছি তিনি বলেছেন, তোমরা আগুনে রান্না করা খাবার খেয়ে ওযূ করিবে। [ইসলামিক ফা:- ৬৭৮, ইসলামিক সে.- ৬৯৩]
Reviews
There are no reviews yet.